প্রকাশিত: Sun, Dec 18, 2022 4:23 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 6:47 AM

মেসির পায়ের জাদু, এমবাপ্পেদের গতি লড়াইয়ে জিতবে কে?

বাতেন মোহাম্মাদ

লড়াইটা দুই দেশের মনে হলেও আসলে লড়াইটা দুই ঘরানার। ল্যাটিনের সাথে ইউরোপিয়ান স্টাইলের। এটা সত্য আর্জেন্টিনা এখন ক্লাসিকাল ল্যাটিন স্টাইলে খেলে না। অর্থাৎ বল পায়ে রেখে, ছোট ছোট পাসে বিল্ডআপ, তারপর এটাকিং থার্ডে কিছু ব্যক্তিগত ক্যারিশমা, কয়েকটা নাটমেগে, তারপর ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে গোল। সেই ফর্মুলা থেকে আর্জেন্টিনা অনেক আগেই সরে এসেছে। এখন তাঁরা ফল নির্ভর হাইব্রিড ফুটবল খেলে। কখনো উইং দিয়ে আক্রমণ বিল্ড করে, কখনো প্রতিপক্ষের পায়ে বল দিয়ে সামনে টেনে নিয়ে এসে কাউন্টারে যায়, কখনো ডিফেন্স করতে করতে লং রেঞ্জ পাস দিয়ে লাক ট্রাই করে। কিন্তু তারপরেও মেসি এখনো সেই ক্লাসিকাল ল্যাটিন মোমেন্ট ক্রিয়েট করে প্রায়ই। এই বিশ্বকাপে অন্তত ৬ বার মেসি এমন সব মোমেন্ট ক্রিয়েট করেছে যাতে যে কারো মুখ হাঁ হতে বাধ্য। তাই আর্জেন্টিনার এই দল আগের থেকে অনেক বেশি শরীর নির্ভর হওয়ার পরেও মেসির কারণেই এখনো ল্যাটিন, এখনো শৈল্পিক। 

বিপরীতে ফ্রান্সের এই দল পুরাই ইউরোপিয় পাওয়ার ফুটবল। দুই উইংয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে গতিবান দুজন (এমবাপ্পে ও দেম্বেলে), নাম্বার নাইন হিসাবে অলিভার জিরুদ যার এয়ার ও ফিজিকাল প্রেজেন্স যেকোনো মুহূর্তে গোলমুখ খুলে দিতে পারে। ইউরোপিয়ান পাওয়ার ফুটবল মূলত বাইলাইন ও স্কয়ার স্টাইলে খেলে। মানে মাঠকে উইংয়ে বড় করে বাই লাইন ক্রস সেখান থেকে হেড অথবা ভলি, গোল। মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ কিংবা বিল্ডআপ খেলা তারা খেলে না। তাদের খেলা মানেই গতি। অনেক সময় লেফট কিংবা রাইট ব্যাকরাই বল পেয়েই ভো-দৌড়। তাই অনেকে বারবার বলছিল, মাঝ মাঠ বলে কিছু নেই। কিন্তু যারা গত বিশ্বকাপ এবং এই বিশ্বকাপ দেখছেন তারা জানেন, গতবার পগবা মাঝমাঠে থাকায় ফ্রান্স আগে বল ক্যাশ করতো মাঝমাঠে পরে সেখান থেকে ডেলিভারি দিতো বিপক্ষ দলের ডি বক্্ের । এইবার পগবা নাই, বেনজেমার মতো বল কন্ট্রোল করে খেলতে পারে এমন খেলোয়াড় নাই, তাই মাঝ মাঠে বল বেশিক্ষণ রাখলে বল হারাতে পারে এই আশঙ্কায় দ্রুতগতিতে আক্রমণে গিয়ে আবার দ্রুতগতিতে নীচে নেমে ডিফেন্স করছে। গ্রীজম্যান, হার্নান্দেজ, শুয়ামেনিকে দেখলেই বুঝা যায় তাঁরা মূলত ফ্রি স্টাইলে উঠে আর নামে। ডিফেন্সে ভারান, উপমানেকো, কোনাটে আর  আক্রমণে এমবাপ্পে ও জিরুদ ছাড়া বাকি পজিশনগুলো দ্রুত নীচে নামছে আবার উপরে উঠছে।

এই ফর্মলেস খেলাটাই ভয়ংকর। একক কোনো খেলোয়াড় নিয়ে পরিকল্পনা করা যায় না। ফ্রান্স জেনে বুঝেই এমন খেলছে। এটাই তাদের ট্যাকটিক্সের অংশ। শক্তির বিচারে ফ্রান্স এগিয়ে আছে। তবে মাঠে দর্শকের  সমর্থন ও মেসির প্রেজেন্স আর্জেন্টিনার প্লাস পয়েন্ট। আমি চিরকালই ল্যাটিন ফুটবলের ভক্ত। আর্জেন্টিনা এখন ক্লাসিকাল ল্যাটিন না খেললেও মেসি, ডি মারিয়া এখনো ল্যাটিন স্টাইলেই খেলে। ফাইনালে আমি আর্জেন্টিনার জয় চাই। সেই ২০১৪ সালের পর আবার ল্যাটিন ও ইউরোপ ফাইনালে আমি ল্যাটিনদের পক্ষে। বিশ^কাপ ইউরোপ থেকে বের হওয়া উচিত। শেষবার ব্রাজিল ২০০২ সালে বিশ্বকাপ ইউরোপ থেকে বের করেছিলো। এখন তার প্রতিবেশী আবার বিশ্বকাপকে ইউরোপ থেকে বের করবে সেই প্রত্যাশায়। ফেসবুক থেকে